গল্প: লাল জামার স্বপ্ন
ঢাকার এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবিদ। মেসে থাকে সে। পরিবারের বাবা-মা আর ক্লাস থ্রীতে পড়ুয়া ছোট বোন গ্রামে থাকে। বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালনা তাই পড়াশুনার পাশাপাশি আবিদ একটা টিউশনি করে। টিউশনিটা ম্যানেজ করে দিয়েছেন হলের রুমমেট বড়ভাই। যাতে কোন প্রকার বদনাম না হয়, পইপই করে তেমনটাই বলে দিয়েছেন।
দৃশ্য-১
(হাউজ টিউটর আবিদ ছাত্র পড়াচ্ছে, ছাত্রের মা টিচারের জন্য শুধু এককাপ চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে)
ছাত্রের মা: ছার (স্যার), আপনি তো শাকিরকে সপ্তাহে ৩ দিন পড়ান এতে ওর হয়না। এর পর থেকে ৪ দিন করে পড়াবেন। পারবেন না!! (কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই) আরে আমি জানি পারবেন।
স্যার (আবিদ): আন্টি, ৪ দিন আমার জন্য বেশি হয়ে যায়। সেমিস্টার সিস্টেমে পড়াশুনা করি তো, বাধ্যতামূলকভাবে ক্লাস করতে হয়।
ছাত্রের মা: ক্লাস করা ছাড়া তো আর আপনার কোন কাজ নাই। দেখেন না ক্লাসে ওর পজিশনটা আরেকটু ওপরে ওঠানো যায় কিনা, তাহলে আপনার দিকটাও ভেবে দেখব।
স্যার (আবিদ): আচ্ছা ঠিক আছে শাকিরের জন্য না হয় একটু বেশি কষ্ট করলাম।
(আসলে একটু বেশি সম্মানীর আশায়)
দৃশ্য-২
(শরীরে অনেকটা জ্বর নিয়ে সেলফোনে আবিদ)
দৃশ্য-১
(হাউজ টিউটর আবিদ ছাত্র পড়াচ্ছে, ছাত্রের মা টিচারের জন্য শুধু এককাপ চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে)
ছাত্রের মা: ছার (স্যার), আপনি তো শাকিরকে সপ্তাহে ৩ দিন পড়ান এতে ওর হয়না। এর পর থেকে ৪ দিন করে পড়াবেন। পারবেন না!! (কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই) আরে আমি জানি পারবেন।
স্যার (আবিদ): আন্টি, ৪ দিন আমার জন্য বেশি হয়ে যায়। সেমিস্টার সিস্টেমে পড়াশুনা করি তো, বাধ্যতামূলকভাবে ক্লাস করতে হয়।
ছাত্রের মা: ক্লাস করা ছাড়া তো আর আপনার কোন কাজ নাই। দেখেন না ক্লাসে ওর পজিশনটা আরেকটু ওপরে ওঠানো যায় কিনা, তাহলে আপনার দিকটাও ভেবে দেখব।
স্যার (আবিদ): আচ্ছা ঠিক আছে শাকিরের জন্য না হয় একটু বেশি কষ্ট করলাম।
(আসলে একটু বেশি সম্মানীর আশায়)
দৃশ্য-২
(শরীরে অনেকটা জ্বর নিয়ে সেলফোনে আবিদ)
স্যার (আবিদ): আন্টি, আমার শরীরটা আজকে ভালনা, আজকে পড়াতে আসতে পারব না মনে হয়।
ছাত্রের মা: ছার, আপনি কী বলেন ১ মাস পরেই শাকিরের পরীক্ষা, আর আপনি আসতে পারবেন না? এটা কোন কথা? না ছার, আপনাকে আসতেই হবে। অল্প সময় হলেও ওকে দেখিয়ে দিয়ে যান।
(সম্মানী কাটার ভয়ে)
স্যার(আবিদ): জ্বী আন্টি।
দৃশ্য-৩
(পাঁচ তলার সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠে দরজার সামনে ঝুলন্ত তালা খেয়াল না করে কয়েকবার কলিংবেল বাজানোর পরে, ছাত্রের মাকে সেলফোনে কল করে আবিদ)
স্যার (আবিদ): আন্টি আপনাদের বাসায় তালা কেন? আপনারা কই? আমিতো শাকিরকে পড়াতে আসছি আগামী সপ্তাহে না ওর হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা?
ছাত্রের মা: ওহ হো, ছার, আপনারে তো বলাই হয়নাই। আজকে আমার ভাইয়ের শালার বিবাহ বার্ষিকীতে আসছি। আজকে আর পড়াতে হবেনা।
স্যার (আবিদ): ও আচ্ছা।
(আবিদ আর মুখে কথা না বলে, মনে মনে বলে ' আপনি তো আমাকে আগেই বললে পারতেন)
ছাত্রের মা: আচ্ছা, ছার কালকে তো আপনার গ্যাপের দিন। তবু কালকে আসেন। শাকিরকে একটু দেখিয়ে দিয়ে যান।
(অনেক দুঃখ নিয়ে)
স্যার (আবিদ): জ্বী, আন্টি।
দৃশ্য-৪
(মেধায় পিছিয়ে থাকার কারণে শাকির পরীক্ষায় দশম থেকে চতুর্থ স্থান অর্জন করার পরে, আবিদকে পরীক্ষার মাসের সম্মানী দিতে দিতে)
ছাত্রের মা: ছার, আপনারে মাসের টাকা তো কম দেইনা, তারপরেও আপনার স্টুডেন তো পরীক্ষায় ভাল করতে পারল না।
স্যার(আবিদ): আন্টি, ও তো আস্তে আস্তে ভালই করছে। ক্লাসের পজিশনও তো বেশ এগিয়েছে।
(মুখের কথা কেড়ে নিয়ে)
ছাত্রের মা: এ আর এমন কী উন্নতি হইছে, মাত্র ১০ থাইকা ৪, রোল নাম্বার এক-দুইয়ের মইধ্যে না থাকলে কি আর স্কুলের টিচার-গার্জিয়ানরা দাম দেয় বলেন!!
স্যার(আবিদ): আমি যখন শাকিরকে পড়ানো শুরু করেছি তখন তো ওর অবস্থা আরও খারাপ ছিল। আন্টি, চিন্তা করবেন না, আগামী বছর আশা করি আরো ভাল হবে।
(কিছুটা বিরক্তির সুরে)
ছাত্রের মা: আচ্ছা, এবারের মত কন্টিনিউ করেন। পরেরবার যদি আমার মনের মত না হয়। টিউটর চেঞ্জ করে ফেলব ভাবছি।
(আবিদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে)
দৃশ্য-৫
(রমজান মাসের ২৫ তারিখ, পরেরদিন আবিদ গ্রামের বাড়ীতে যাবে ঈদের ছুটিতে, মেসের সবাই অলরেডি চলে গেছে। ছাত্র পড়াতে গিয়ে)
স্যার(আবিদ): ইয়ে মানে, বলছিলাম কি যে...
ছাত্রের মা: আরে ছার, বলে ফেলেন, কোন সমস্যা নেই।
স্যার(আবিদ): না মানে...আন্টি, গত মাসের অনারিয়ামটা পেলে খুব উপকৃত হতাম। আজ তো মাসের ১৩ তারিখ!!
আর রমজানও তো প্রায় শেষ। আমার মেসের সবাই অলরেডি যে যার বাড়িতে চলে গেছে।
(মুখভঙ্গি একেবারে চেঞ্জ করেই)
ছাত্রের মা: ছার আর বলবেন না, এই মাসে এত টানাটানি যাচ্ছে না, শাকীরের বাবা বেতন পেয়েই নতুন এলইডি টিভিটা কিনে বসল, তার ওপর এত এত আত্মীয়-স্বজনের চাপ, কেনাকাটা করা শুরু করতেই নাই হয়ে গেছি। তাই আপনার টাকাটা দিতে একটু দেরি হচ্ছে। কিছু মনে করবেন না কিন্তু....
স্যার(আবিদ): (কাচুমাচু দৃষ্টিতে তাকিয়ে) আন্টি, আমার মেসের ভাড়াটা দিতে হত। তার ওপর বাড়িতে যাবার পথ খরচটাও নাই।
ছাত্রের মা: আচ্ছা, আপনারা এত টাকা টাকা করেন কেন বলেন তো!! এই ক'টা টাকার জন্য কি কারও জীবন আটকে থাকে নাকি!! টাকাটা আগামী মাসে একসাথে নিয়েন।
(আবিদ আর কোন কথা না বাড়িয়ে টিউশনি চলে যাবার ভয়ে)
স্যার(আবিদ): জ্বী আন্টি!
(অন্যরুমে গিয়ে হাতে করে টাকা এনে)
ছাত্রের মা: আচ্ছা, ঠিক আছে। (অর্ধেক টাকা দিয়ে) এই টাকাটা দিয়ে এই ক'দিন চলেন। আগামী মাসে বাকীটা নিয়েন।
(মুখ কাচুমাচু করে, রাজ্যের হতাশা নিয়ে আবিদ বেরিয়ে আসে। রাস্তায় হাটতে হাটতে)
স্বগতোক্তি: "স্টুডেন্ট পরীক্ষায় ভাল করলে সম্মানী বাড়ানোর কথা ছিল, তা তো বাড়াল না। ভেবেছিলাম এ মাসের টাকাটা ঈদ বোনাসসহ পাব, তাও হলনা। ছোট বোনটাকে লাল জামা কিনে দেয়ার কথাও বলে ফেললাম।
আব্বা-আম্মাকেও কিছু দেয়া দরকার।
আচ্ছা, আব্বা-আম্মাকে না হয় বোঝালাম, বুঝবেন। কিন্তু ছোট বোনটাকে কি বোঝাবো? যে কয় টাকা দিয়েছে সেটা দিয়ে বড়জোর বাড়িতে আসা-যাওয়ার খরচটা হবে।
নাহ মাথায় আর কাজ করছে না।"
মেসে ফিরে আবিদ বিছানায় শুয়ে সিলিংয়ে ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবে, জীবন চাকা কেন এমন করে ঘোরে?)
শিক্ষণীয় বার্তাঃ আপনার বাচ্চাকে যে টিউটর পড়ান তিনি অবশ্যই মেধাবী। প্রয়োজনের তাগিদে তিনি আজকে আপনার বাসায় আসছেন, পরিশ্রম করছেন। তার সাথে অমানবিক হবেন না- তাকে তার ন্যায্য প্রাপ্য পরিশোধ করুন, ভাল ব্যবহার করুন। কে জানে, কাল হয়ত আপনার সন্তানকেও এমন করে কারো বাসায় যেতে হতে পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন